আপনি যদি প্রবাসে বাস করে থাকেন, তাহলে আপনার বিভিন্ন সময় লোনের প্রয়োজন হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা যখন প্রবাসের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হই, তখন প্রবাসী লোন আমাদের প্রয়োজন হয়। প্রবাসী লোন নিয়ে আমরা আমাদের চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারি, এবং যে কোন বাধা কে অতিক্রম করতে পারি। আপনি যদি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম এবং এবিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান, তাহলে এই লিখাটি পড়তে পারেন। এখানে আমরা বিস্তারিত তথ্য সহকারে আলোচনা করব, যেন আপনি খুব সহজে প্রবাসী লোন গ্রহণ করতে পারেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ও পরিচিতি
আমাদের অনেকের কাছে প্রবাস জীবন অনেক সুখি হলেও আসলেই প্রকৃতপক্ষে প্রবাস জীবন একেবারেই সুখী নয়। আপনি যদি প্রবাসে বাস করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই এ বিষয়টি আপনার জানা রয়েছে। কারণ প্রবাসে যদি থাকেন, তাহলে আপনার বিভিন্ন সময় যে কোন মুহূর্তে পরিবারের জন্য লোনের প্রয়োজন হতে পারে।
এমনকি আপনার ভিসা রিনিউ করার জন্য অনেক সময় লোনের প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি প্রবাসী কল্যাণ সংস্থা থেকে আপনি লোন গ্রহণ করে, সেই লোন দিয়ে আপনার চাহিদা মেটাতে পারেন।
যদি আপনার মনে হয় যে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া প্রয়োজন। এবং এবিষয় সম্পর্কে আপনার জানা প্রয়োজন, তাহলে এই লেখাটির সম্পূর্ণ পড়ুন। আশা করতেছি এখানে আপনি সকল গাইডলাইন পাবেন, এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার সিস্টেমগুলো বুঝতে পারবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন ধরনসমূহ:
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ঋণ প্রদান করে থাকে,
এই অংশের মধ্যে আমরা ব্যাংক থেকে কি কি ধরনের লোন পেতে পারি, বা কি কি প্রকারের লোন রয়েছে, এ বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব। অনেকেই প্রবাস জীবনের লোন গ্রহণ করতে ইচ্ছা পোষণ করে, কিন্তু লোন গ্রহণ করতে পারে না। কারণ কোন প্রকারের লোন গ্রহণ করবে, সে বিষয়টি বুঝে উঠতে পারে না।
এজন্য একটি সমস্যার সম্মুখীন তৈরি করে। যেন এ সমস্যা থেকে যেন বেরিয়ে আসতে পারেন। তাই আমরা এখানে সঠিকভাবে আপনাদের জন্য তথ্যগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন প্রকারের ব্যাংক লোন সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব, যেমন:
বিদেশে যাওয়ার জন্য ঋণ:
আপনি যদি বর্তমানে দেশে অবস্থান করেন, এক্ষেত্রে যদি বিদেশে যাওয়ার জন্য আপনার পরিকল্পনা রয়েছে এমন হয়। এবং আপনার যদি সমস্ত কিছু প্রস্তুত করেন যে, বিদেশে যাওয়ার জন্য। তাহলে আপনি প্রবাসী লোন নিয়ে সেই চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারেন।
অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা না থাকার কারণে বিদেশে যাওয়া অসম্ভব হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আপনি যদি বিদেশ যাওয়ার জন্য লোনের সম্মুখীন হন, তাহলে আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে সেই লোনের মাধ্যমে বিদেশে যাইতে পারেন।
বিদেশে যাওয়ার জন্য আপনি একাধিক পদ্ধতিতে লোন গ্রহণ করতে পারেন। তবে আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে যদি লোন গ্রহণ করেন সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন। কারণ এই ব্যাংক আপনার কষ্ট বুঝবে, এবং তারা যেহেতু নিয়মিত এই বিষয়গুলোর উপরে লোন প্রদান করে থাকে, সেজন্য আপনাকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে।
এই লোনের প্রকারটি শুধুমাত্র তাদের জন্য, যারা এখনো বিদেশে যায়নি। তবে বিদেশে যাওয়ার জন্য সব পরিকল্পনা ঠিক করেছেন, এবং আপনার ভিসার জন্য সব কার্যক্রম তৈরি করেছেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার বিদেশে যাওয়ার কাজকে আরো সহজ করার জন্য, বা অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন গ্রহণ করবেন।
রেমিটেন্স ভ্যালু চেইন ঋণ:
আপনি যদি একজন প্রবাসী ব্যক্তি হয়ে থাকেন, এবং দেশে যদি নিয়মিত রেমিটেন্স পাঠান, তাহলে সে রেমিটেন্সের উপরে নির্ভর করে আপনি আপনার বাড়ির কাজের জন্য, অথবা যে কোন বড় ধরনের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য, বা ব্যবসা করার জন্য রেমিট্যান্স ব্যবহার করেই আপনি বেশি পরিমাণ লোন গ্রহণ করতে পারেন।
মূলত আপনি যত বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠাবেন, তত বেশি আপনি লোনের জন্য যোগ্য হবেন। এক্ষেত্রে আপনার রেমিটেন্স এর মাধ্যম গুলো অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে। যেন আপনি সঠিক প্রক্রিয়াতে যদি রেমিটেন্স গুলোর লেনদেন করেন, তাহলে আপনি ব্যাংক থেকে উৎসব পরিমাণে লোন গ্রহণ করতে পারবেন। এবং সেই লোন গুলো দিয়ে জমি ক্রয় করা, বাড়ি তৈরি করা, অথবা আপনি কোন ব্যবসা শুরু করার জন্য সেই সুযোগকে গ্রহণ করতে পারবেন।
সর্বজনীন ঋণ:
এই লোনের প্রকারটি শুধুমাত্র জরুরী প্রয়োজনে যে কোন মুহূর্তে আপনি গ্রহণ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে বেশি পরিমাণ লোন দিবে না। এখানে স্বল্প পরিমাণ লোন আপনাকে প্রদান করবে। সার্বজনীন লোন যদি গ্রহণ করেন, তাহলে আপনাকে নির্দিষ্ট একটি অ্যামাউন্ট এর মধ্যেই আপনার চাহিদাগুলো পূরণের জন্য লোন গ্রহণ করতে পারেন।
শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজনে এই লোন সুবিধাটি দিয়ে থাকে, এবং এই লোনের মধ্যেই সুদের পরিমাণও বেশি থাকে।
অর্থাৎ আপনি যদি সর্বজনীন লোন গ্রহণ করে থাকেন। এটি জরুরি মুহূর্তে যে কেউ গ্রহণ করতে পারেন। এবং এক্ষেত্রে আপনাকে বেশি পরিমাণ সুদ প্রদান করতে হবে। আপনার টাকাগুলোকে পরিশোধ করার সাথে সাথে সুদ পেমেন্ট করতে হবে। তাই আপনি যদি সার্বজনীন লোন না নিয়ে অন্যান্য ক্যাটাগরি থেকে লোন নিতে পারেন। এটি আপনার জন্য ভালো হবে।
ফেরত প্রবাসীদের জন্য পুনর্বাসন ঋণ:
অনেকে বিদেশে গিয়ে ব্যর্থ হন, এবং বিদেশে কিছু করতে না পেরে দেশে ফিরে আসেন। দেশে এসে যদি আপনি নতুনভাবে কিছু করতে চান, এবং স্বল্প পরিমাণ বিনিয়োগ যদি বিদেশ থেকে নিয়ে আসেন, তাহলে সেগুলোর সাথে আরও বেশি পরিমাণ বিনিয়োগ সংগ্রহ করে সেই বিজনেসটি শুরু করতে পারেন। এটি আপনি দেশের মধ্যে বসে করতে পারবেন।
অনেকে মূলত দেশে এসে নতুনভাবে কোন একটা কিছু শুরু করার পরিকল্পনা করেন, অথবা দেশের বাইরে এমন কোন আইডিয়া দেখছেন যে, আইডিয়াটি দেশের মধ্যে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে লাভবান হতে পারবেন এরকম মনে করেন, তাহলে আপনি দেশে এসে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করে, সে আইডিয়াটি বাস্তবায়ন করতে পারেন।
যে কোন আইডিয়া বাস্তবায়ন করার জন্য আপনার আইডিয়ার উপরে নির্ভর করে ব্যাংক আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণ লোন প্রদান করতে রাজি হবেন।
ঋণ প্রাপ্তির শর্তাবলী
যেকোনো ব্যাংক থেকে লোন পেতে হলে তাদের কিছু শর্ত মেনে নিতে হয়। আপনি যদি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করতে চান, এক্ষেত্রে আপনাকে কিছু শর্ত মেনে তাদের কাছ থেকে লোন গ্রহণ করতে হবে।
এখানে প্রধান শর্তাবলী তুলে ধরা হলো:
বয়স সীমা: আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
- পাসপোর্ট ও ভিসা: বৈধ পাসপোর্ট এবং ভিসা থাকতে হবে। আপনি যদি প্রবাসী না হয়ে থাকেন, শুধুমাত্র জেনারেল কোন ব্যাংক থেকে লোন গ্রহন করতে চান, এই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয় পত্র থাকতে হয়। কিন্তু যেহেতু আপনি প্রবাসী লোন গ্রহন করবেন, এজন্য আপনার পাসপোর্ট থাকতে হবে।
- অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট: এনআইডি কার্ড, ট্যাক্স আইডি নম্বর (TIN), এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার জন্য এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যেকোন ব্যাংক এই তথ্যগুলো চাইবে। এজন্য আপনি যদি লোন গ্রহণ করতে চান এই তথ্যগুলো আপনাকে প্রথম থেকেই গোছানো রাখতে হবে।
- আবেদন ফি: নির্ধারিত আবেদন ফি জমা দিতে হবে। ব্যাংকের লোনের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আবেদন ফি জমা দিতে হয়। কারণ আপনার কাগজপত্র এবং অন্যান্য কার্যক্রম গুলোকে প্রসেসিং করার জন্য আবেদন ফি পরিশোধ করতে হবে। এজন্য আপনার যদি আবেদনটা সঠিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে চান, এবিষয়ে আবেদন ফি দিয়ে আপনাকে যথাসম্ভব কাজগুলো দ্রুত করতে হবে।
ঋণ প্রাপ্তির প্রক্রিয়া
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন পাওয়া খুবই সহজ। এর জন্য আপনাকে প্রথমে আবেদন করতে হবে, এবং আবেদন করার পূর্বে অবশ্যই সঠিক কাগজপত্র এবং প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো আপনাকে অবশ্যই জমা দিতে হবে। যদি এগুলো আপনি জমা দিয়ে থাকেন, আবেদনের পরে আপনি কয়েকটি কর্ম দিবসের মধ্যেই লোন পেয়ে যাবেন। লোন প্রাপ্তির জন্য আপনাকে সরাসরি ব্যাংকে যেতে হবে। ব্যাংক থেকে সে লোনগুলো উত্তোলন করেন নিতে হবে।
যখন আপনি লোনের জন্য আবেদন করবেন। অবশ্যই আপনাকে টাকা উত্তোলনের জন্য একটি প্রমাণ পত্র দেওয়া হবে। সে প্রমাণপত্রের মাধ্যমে আপনি সিগনেচার করেই আপনার লোনগুলো উত্তোলন করবেন।
ঋণ পরিশোধের নিয়মাবলী
প্রতিটি ব্যাংকের মধ্যেই মাসিক বা সপ্তাহে হারেই লোন পরিশোধ করতে হয়। আপনার লোনের উপরে নির্ভর করে কিরকম লোন আপনি গ্রহণ করেছেন। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে যদি লোন গ্রহণ করে থাকেন, সাধারণত মাসিক ভিত্তিতে আপনাকে লোন পরিশোধ করতে হতে পারে। যদি আপনার সুবিধা থাকে, আপনি যদি সপ্তাহে পরিশোধ করার জন্য সক্ষম হয়ে থাকেন, তাহলে ব্যাংকের সাথে আলোচনা করেই সেই সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।
সবগুলো ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ধরনের কাস্টমারদের কে দেওয়া হয়। আপনি যদি একজন কাস্টমার হিসেবেই আপনার সুবিধাগুলো পেতে চান, তাহলে ব্যাংকের সাথে সরাসরি কথা বলেই সেই সুবিধাগুলো উপভোগ করতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত সারমর্ম:
সম্মানিত পাঠক, আপনি আশা করতেছি ব্যাংক লোন সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। আপনি যদি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন সংগ্রহ করতে চান, তাহলে আশা করি আপনি খুব সহজেই ব্যাংক লোন কিভাবে নিতে হয়, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত সম্পূর্ণ তথ্য বুঝতে পেরেছেন।
আমাদের কাছে অনেকেই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও নিয়ম সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তাই আমরা আপনাদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ থেকে কিভাবে ব্যাংক লোন নিতে হয়? সে বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ তথ্য শেয়ার করেছি।
এসম্পর্কিত আরো বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য আপনি সরাসরি ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ব্যাংকের নিকটস্থ যেকোনো একটি অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করলে আপনি বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।