ব্যবসা করার কৌশল –2024: প্রতি ১০০ স্টার্টআপের মধ্যে ৯০ স্টার্টআপ ফেল হয়ে যায়। এটা সবাই জানার পরেও অসংখ্য মানুষ কোমর বেঁধে রোজ এই ব্যবসা খেলায় নেমে পড়েন। সবাই এটা মনে করে যে, তার আইডিয়ার মাধ্যমে পরবর্তী তিনি একজন বিলিয়নিয়ার হতে চলছে। যদি আপনিও তাদের মধ্যে একজন হন, তবে সম্ভবত ইতিমধ্যে আপনি সেই স্বপ্নটা কে সত্যি করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
এবার একটা খারাপ খবর আছে। তথ্য বলছে শুধু একটা ভালো আইডিয়া আর প্রচুর Hard Work সাকসেসফুল ব্যবসা গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট না। এগুলো ছাড়াও আরও বেশ কিছু ব্যবসা করার কৌশল রয়েছে। যেগুলো অনেক বড় Role play করে যায়।
যেমন –
- Society-তে আপনি এখন কোন পজিশনে আছে?
- আপনি কতখানি চালাকচতুর?
- আপনার Personality কেমন?
৬টি ব্যবসা করার কৌশল (Business strategy):
সব সময় বেস্ট আইডিয়াটি সফল হবে এর কোনো গ্যারান্টি থাকে না। কিন্তু একটা ভালো খবর আছে। আর সেটা হলো যে, আপনি যেই হোন না কেন। আপনার কাছেও একটা ইউনিক Unfair advantage অবশ্যই আছে। যেটা আপনাকেও ব্যবসা করার কৌশল জানতেে এবং সাকসেসফুল হতে অনেকখানি সাহায্য করতে পারে।
একবার যদি আপনি আপনার সেই Unfair advantage কে চিহ্নিত করে সেটা কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে আপনার স্বপ্ন পূরণ হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবেনা।
তাই আপনাকে আপনার ব্যবসা করার কৌশল খুঁজে পেতে সাহায্য করার জন্য। The Unfair Advantage বই থেকে কিছু স্মার্ট আইডিয়া শেয়ার করতে চলেছি। তো আর দেরি না করে চলুন জেনে নিই ৬টি ব্যবসা করার কৌশল।
১. ব্যবসা করতে Unfair Advantage –
আপনি যেই হোন না কেন। আপনার কাছে একটা Unfair Advantage আছে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে Unfair Advantage কমন থাকে। যেমন – কোন ধনী পরিবারে জন্মানো, দেখতে খুব সুন্দর। এটার একটা খুব ভালো উদাহরণ হতে পারে Snapchat এর কো-ফাউন্ডার Evan Spiegel। তিনি মাত্র ২৫ বছর বয়সে একজন কোটিপতি হয়ে উঠেছিলেন।
যেহেতু তার মা-বাবা অত্যন্ত ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। তাই শুরু থেকেই ইস্পিগালের কাছে অর্থ ও অন্যান্য সাকসেসফুল বিজনেসম্যানদের সাথে ওঠাবসা ছিল। এমনকি বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদেরও সাথেও তার পরিচয় ছিল। এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, স্ন্যাপচ্যাটের আইডিয়াটা ভিশন Innovative ছিল। কিন্তু আবার এটাও সত্যি যে, তিনি যে আনফেয়ার অ্যাডভান্টেজগুলো পেয়েছিলেন। সেগুলোর কারণেই এত অল্প সময়ে এতদ্রুত Grow করার সুযোগ পেয়ে গেছিল।
তার মানে কি?
যদি আপনার বড় লোকদের সাথে উঠাবসা না থাকে, তাহলে আপনি কখনোই ধনী হতে পারবেন না?
অবশ্যই পারবেন।
পারবেন না সেটা কখনোই হতে পারে না। এরকম আরও অনেকগুলো কার্যকর ব্যবসা করার কৌশল থাকে। যেগুলো ধনী হওয়ার মতো বা সুন্দর হওয়ার মতো একেবারে চোখের সামনে থাকে না। কিন্তু ঠিকই সেগুলো অনেক পাওয়ারফুল হয়ে থাকে। আপনি আজ পর্যন্ত যত সাকসেসফুল মিলিনিয়ারদের কাহিনী শুনেছেন। তাদের গল্পগুলো একবার মনে করেন অথবা এই The unfair advantage বইয়ের লেখক Ash Ali and Hasan Kubba কথাটাই নিয়ে নিন।
Ash Ali ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম শহরের জন্মেছিলেন। যেখানে কালো কাজ করাটা নরমাল একটা জিনিস ছিল। অন্যান্য বন্ধুরা যখন কলেজে ডিগ্রি পড়ার জন্য ভর্তি হয়, তখন বাধ্য হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে একটা অফিস সাপ্লাইয়র কাজ করতে শুরু করতে হয়। কিন্তু শুরু থেকেই আলী একজন ন্যাচারাল উদ্যোক্তা ছিলেন।
ব্যবসা করতে টাকা লাগে না, লাগবে ৬টি ব্যবসা করার কৌশল
মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই তিনি বিভিন্ন ভাবে টাকা রোজগার করা শুরু করে দিয়েছিলেন। ১৯ বছর বয়সে যখন তার এক বন্ধু এসে তাকে অফার করেন একটা অনলাইন জুতোর দোকান শুরু করার জন্য। আলী সাথে সাথে সেই প্রস্তাবে হ্যাঁ করে দেন। গল্পটার ১৯৯৮ সালের যখন ই-কমার্স বিজনেস এর তেমন কোনো পরিচিতি ছিল না।
এই ব্যবসা শুরু করার জন্য আলী নিজে নিজেই ওয়েবসাইট বিল্ডিং এর ব্যাপারে শিখতে শুরু করে দেন। এভাবে উনারা দুজনে মিলে একটা অনলাইন স্টোর চালু করে ফেলেন এবং অর্ডারও আসা শুরু হয়ে যায়। এখান থেকেই আলী ওনার ক্যারিয়ারে একটা সলিড বুস্ট পান। তারপর থেকে তিনি একের পর এক স্টার্টআপে যোগ দেন এবং তিনি বর্তমানে একজন দক্ষ ইনভেস্টরে পরিণত হয়েছেন।
তো আপনার এডভান্টেজ স্পিগেলর মত হোক বা আলীর মতো হোক। আপনার কাজ হচ্ছে এটাকে Identify করে সঠিকভাবে ব্যবসা করার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা।
২. ব্যবসা করতে টাকা সব কিছু না ঠিক, কিন্তু সাহায্য প্রচুর করে:
আপনারও কি বিয়েটা এমন মনে হয়। যদি আপনার কাছে অনেক টাকা থাকতো, তাহলে আপনার জন্য বিজনেস শুরু করা কত সহজ একটা ব্যাপার হয়ে যেত। এমন চিন্তা আপনার একেবারে ভুল না। শুরুতে মোটা অঙ্কের টাকা থাকলে সেটা অনেকখানি Advantage দিয়ে যায়।
কেননা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবসা থেকে প্রফিট আদায় করতে অনেকদিন প্রয়োজন হয়। ততদিন অবধি প্রচেষ্টা চালানোর জন্য নিজের পেট ভরানো, ইলেকট্রিক বিল, কর্মীদের বেতন দরকার। তাই শুরু থেকেই যদি কিছু টাকা থাকে তাহলে অনেকখানি সাহায্য পাওয়া যায়।
সাধারণত মনে করা হয় কোন ব্যবসায় নামার আগে সেই ব্যবসাটা চালানোর জন্য কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ মাস অব্দি চালিয়ে যাওয়ার মতো পুঁজি আগে জোগাড় করে নিতে হবে। যখন Jam WhatsApp Development করা শুরু করেছিলেন, তখন Allready তার কাছে চাকরি করে আয় করা ৪ লাখ ডলার রাখা ছিল।
আপনার কাছে যদি এতো টাকা না থাকে তবুও কোন সমস্যা নেই। যদি না এমন অত্যন্ত ধনী ব্যক্তি যারা আপনার ব্যবসাতে বিনিয়োগ করতে পারে। এরকম লোকের সাথে আপনার ভালো সম্পর্ক থাকে তাহলে তাদের যুক্ত করান। Mark Zuckerberg যখন ফেসবুক শুরু করেছিলেন, তখন তিনি এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ৫০ হাজার ডলারের ফান্ড সংগ্রহ করে রেখেছিলেন।
মোটা অংকের টাকা যদি আপনার কাছে থাকে, তাহলে এটা আপনাকে আপনার ব্যবসা শুরু করতে যেমন সাহায্য করবে, তেমন আপনার ব্যবসা কোনো জায়গায় ডাউন হলে তা থেকে উঠে আসার জন্যও সহায়ক হবে। যারা অত্যন্ত ধনী ব্যক্তি তাদের যদি কিছু টাকা ডুবেও যায়, তবুও তাতে তাদের লাইফস্টাইলে কোন রকমের পরিবর্তন হয় না। যে কারণে তারা অনেক সহজে রিস্ক নিতে পারেন।
এবার আপনি যদি এটা ভেবে ডিমোটিভেটেড হয়ে পরতে শুরু করেন। আর বলেন, ভাই আমার তো না কোনো বড় অঙ্কের টাকা আছে। আর না আমার কোনো বড়লোক মামা আছে যে আমায় টাকা দেবে। তো আমি আপনাকে বলব চিন্তার কিছু নেই। যে কোন বিজনেস শুরু করতে হলে শুরুতেই প্রচুর টাকা থাকতেই হবে সেটা কিন্তু সত্যি না।
সেরকম ব্যাপার হলে, আপনি এরকম বিজনেস শুরু করতে পারেন। যেখানে শুরুতেই বিশাল অঙ্কের টাকা থাকার কোনো দরকার হয় না এবং কাস্টমারদের কাছ থেকে সাথে সাথেই টাকা কালেক্টও হয়ে যায়।
যেমন ধরুন- একটা অনলাইন স্টোর অথবা যদি আপনার স্টার্টআপ আইডিয়াটা ভীষণ ভালো হয়, তবে আপনি ইনভেস্টরদের থেকেও ফান্ড সংগ্রহ করতে পারেন। যাই হোক মোটা অংকের পুঁজি থাকলে সেটা একটা অনেক বড় একটা Unfair advantage দিয়ে যায় ঠিকই। কিন্তু শুধুমাত্র প্রচুর টাকা নেই বলে নিজে স্টার্টআপ আইডিয়াটা সম্পূর্ণ ড্রপ করে দেওয়াটাও বোকামি।
৩. EQ ও IQ স্টার্টআপের জন্য জরুরি –
যেমন স্কুলের মধ্যে এমনকিছু ছাত্র থাকে যারা একটা জিনিস চট করে শিখে যেতো। এরকম বাচ্চারা যদি বড় হয়েছে বিজনেস শুরু করে, তাহলে তাদের Successful হওয়ার চান্স অনেক বেশি থাকে। কারণ, স্টার্টআপ শুরু করতে হলে প্রতিদিন নতুন নতুন স্কিল শিখতে থাকবে হয়। তাই যারা কোন নতুন স্কিল খুব তাড়াতাড়ি শিখে নিতে পারে। তারা অনেকখানি আনফেয়ার অ্যাডভান্টেজ পেয়ে যায়।
উদাহরণ হিসেবে যদি Coalition Brothers এর কথা বলি। তিনি অনলাইন পেমেন্ট কোম্পানি স্ট্রাইফ শুরু করেছিল ১৮ বছর হওয়ার আগেই। এই দুই Intelligent ভাই মিলে অলরেডী দুটি টেক স্টার্টআপ শুরু করেছিল। এবং অফিশিয়ালি কোটিপতি তে পরিণত হয়েছিল। এদের মধ্যে একজন মাত্র ১০ বছর বয়সে প্রোগ্রামিং করতে শিখেছিল। এবং ১০ বছর বয়সের মধ্যে একটা নতুন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজও ডেভেলপ করে ফেলেছিল।
আর অন্য ভাই Jon সব থেকে হায়েস্ট রেট নিয়ে পাস করেছিল। যদিও সেই প্রাপ্তি কোনো কাজে আসেনি। কারণ, রেজাল্ট বেরোনোর আগেই হাবার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে তার অ্যাডমিশন অ্যাপ্লিকেশন একসেপ্ট করে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একটা সাকসেসফুল বিজনেস গড়ে তোলার জন্য শুধুমাত্র Higher IQ থাকা যথেষ্ট না।
তার জন্য Higher IQ মানে লোকজনদের অনুভূতি বুঝতে পারার ক্ষমতা থাকা অত্যন্ত জরুরী। আপনারও কি এরকম কিছু বন্ধু আছে। যারা খুব সহজেই নিজের কথার মধ্য দিয়ে অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে? এবং তাদেরকে কেউ কখনো সহজে বোকা বানাতে পারে না?
যদি থাকে, তাহলে আপনার উচিত তার কাছ থেকে শেখা। কারণ, এইগুলো Business World এর ভীষণভাবে কাজে লাগে। যেমন Nikola Tesla কে দেখুন যিনি রিমোট কন্ট্রোল রেডিও এবং এমনকি রোবট বানিয়ে ফেলেছিলেন। একবার Thomas Edition ৫০ হাজার ডলার দিয়ে নিকোলা টেসলা কে অফার দেন তার মোটর এবং জেনারেটর ডিজাইন কে আরও উন্নত করার জন্য। কিন্তু যখন তার সেই কাজটা করে দেন, তখন তিনি নিকোলা টেসলা কে বললেন।
তিনি আসলে মজা করে কাজের অফারটা দিয়েছিলেন এবং তাকে একটা টাকাও না দিয়ে চলে যান। এত বেশি ট্যালেন্ট হওয়া সত্ত্বেও এই কারণে কোনদিন Nikola Tesla ধনী হয়ে উঠতে পারেনি। কারণ, ব্যবসা করার কৌশল হিসেবে Capitalization এর জন্য যে দক্ষতাগুলো থাকা দরকার সেগুলোতে তিনি কোনদিনই ইন্টারেস্টেড ছিলেন না।
৪. Unfair advantage খোঁজার জন্য নিজের ক্রেতার জায়গা থেকে চিন্তা করুন –
নিজের কাস্টমারের দিক থেকে ভেবে আপনি অনেক ভাল উপযুক্ত ইনসাইড পেতে পারেন। যেমনটা Will Sue তার কর্মীদের বাইকে করে ঘুরে বেরিয়ে বেড়িয়ে ছিলেন। সু তার ডেলিভারি বিজনেসের শুরুতেই একটা বাইক নিয়ে ডেলিভারি বয়ের কাজ করেছিলেন। এটি ব্যবসা করার কৌশল হিসেবে দারুণ ছিল।
যাতে করে তার কোম্পানি যে Service provided করছে তার প্রতিটি বিষয় তিনি বুঝতে পারেন। এইভাবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, একজন ডেলিভারি বয় কে ঠিক কিকি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়? এবং কাস্টমার ও রেস্টুরেন্টদের কি কি বাধার সম্মুখীন হতে হয়? আপনিও চাইলে এরকম কিছু করতে পারেন।
কিন্তু সব সময় এত বড় কিছু করার দরকার পড়ে না। আপনি যদি শুধু নিজের কাস্টমারদের অনুধাবন করতে থাকেন, তাদের সাথে কথা বলে তাদের চাহিদা জেনে নিতে পারেন। ফিডব্যাক কালেক্ট করতে পারেন এবং সেই মতো এক এক করে তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে থাকতে পারেন। এই জিনিসটা আপনাকে অনেক বড় একটা অ্যাডভান্টেজ এনে দিতে পারে।
৫. ব্যবসা সফল হওয়ার জন্য লোকেশন এবং টাইমিং সঠিক হওয়া গুরুত্বপূর্ণ –
যখন সাকসেসফুল লোকেরা তাদের ব্যাপারে কথা বলেন, তখন তাদের মধ্যে অনেক কে হয়তো আপনি বলতে শুনে থাকবেন ”আমি শুধু সঠিক সময় সঠিক জায়গায় ছিলাম”। হয়তো এই কথাটা শুনতে আপনার নগন্য মনে হতে পারে। কিন্তু কথাটা কিছুটা হলেও সত্যি এটি দারুণ ব্যবসা করার কৌশল। সিলিকন ভ্যালি কে দেখুন গুগল, অ্যাপল, ফেসবুক কোম্পানি তিনটি সিলিকন ভ্যালিতে রয়েছে।
ভবিষ্যতে যারা গুগল, অ্যাপল, এবং ফেসবুকের মতো কোম্পানি দাঁড় করাতে চান, তাদের টার্গেট হচ্ছে সিলিকন ভ্যালি। এখানে অনেকগুলো বড় বড় ইউনিভার্সিটি রয়েছে। যেখান থেকে প্রতিবছর প্রায় কয়েক হাজার সায়েন্স, টেকনোলজি, ম্যাথ, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে বেরিয়ে আসেন। যে কারণে কোম্পানিগুলো রিক্রুটমেন্ট এর জন্য অনেক বড় একটা সুবিধা পেয়ে যায়।
তার ওপর ১৯৭০ সাল থেকে বড় বড় Venture capitalist গুলো সিলিকন ভ্যালিতে গড়ে উঠেছে। ফলে ব্যবসার ইনভেস্টমেন্ট পাওয়াও অনেক সোজা হয়ে যায়। ২০১৭ থেকে আমেরিকাতে মোট যতগুলো স্টার্টআপ শুরু হয়েছিল, তার ৪৫% শুধুমাত্র এখান থেকেই হয়েছিল। যেখানে এটা মাত্র ৫০ স্কোয়ার মাইলের ছোট্ট একটা এরিয়া। এতে পরিষ্কার বুঝা যায় এই জায়গা একটা বিশাল বড় এডভান্টেজ।
ব্যবসা করার কৌশল হিসেবে সময়ের কি গল্প?
সকল কাজের যেমন একটা সঠিক সময় থাকে, ঠিক স্টার্টআপেরও একটা সঠিক সময় থাকে। এমনকি একটা অসাধারণ আইডিয়া ফ্রক হয়ে যেতে পারে শুধুমাত্র যদি একটা সঠিক সময় নির্ধারণে ভুল হয়। এক্ষেত্রে সবথেকে বড় একটা এক্সাম্পল হতে পারে Dropbox। তাদের এখন ফাইভ হান্ড্রেড মিলিয়ন ইউজার বেস তৈরি হয়ে গেছে।
কিন্তু Dropbox প্রথম ক্লাউড স্টোরেজ না যেটা মার্কেটে এসেছিল। তার আগে ১৯৯০ সালে একদম সেই একই আইডিয়ার উপরই অন্য একটা স্টার্টআপ লঞ্চ হয়েছিল। কিন্তু সেটা বাজেভাবে শেষ হয়ে পড়েছিল। কারন তখন ইন্টারনেট কানেকশন যথেষ্ট ছিল না ফলে ব্যবসা করার কৌশল হিসেবে টাইমিংটা ভুল ছিল।
৬. আপনি কে, এবং কোথা থেকে বসবাস করেন?
এদুটো জিনিষ সবথেকে বেশি Advantage দিয়ে যায়। যেমন আপনি যদি কোন হাবার্ট, স্ট্যান্ডফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পান। তবে সেখানে আপনার যাদের সাথে পরিচয় হবে, পরবর্তীতে আপনার সফলতার পিছনে তাদের অনেক বড় একটা Rule play করে যেতে পারে। একটু ভেবে দেখুন, ইউনিভার্সিটিগুলোতে High tuition fees থাকে, সেটার জন্য শুধুমাত্র কোন ধনী পরিবারের পক্ষে সম্ভব এই ইউনিভার্সিটি গুলোতে পড়া।
ফলে সেখানে আপনার যাদের সাথে পরিচয় হবে, তাদের মধ্যে থেকে কেউ হয়তো ভবিষ্যতে আপনার কোম্পানিতে ইনভেস্ট করার জন্য রাজি হয়ে যেতে পারে। শুধু এটুকুই না, ক্যাম্পাসেই হয়তো আপনার সাথে আপনার ভবিষ্যত কো-ফাউন্ডারের দেখা হয়ে যেতে পারে। যেমনটা Bill Hewlett and Debit Pakat এর ক্ষেত্রে হয়েছিল।
Transferred University এদুজনের একে অপরের সাথে পরিচয় হয় এবং পরেই দুজন একসাথে “HP” কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করলো।
এবার একটা মূহুর্ত আপনি অনুভব করুন। বিমানের টিকেট সংগ্রহ করার জন্য আপনি একটা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। পাশ থেকে একজন সেলিব্রেটি আসল এবং কোন লাইনে না দিয়ে তাকে সরাসরি ঢুকতে দেওয়া হলো। এটাই হচ্ছে Unfair advantage। যেটা শুধু লাইনে না, এমনকি লাইফেও আগে বেরিয়ে যেতে অনেক সময় আনফেয়ার অ্যাডভান্টেজ দিয়ে যায়।
চাকরির রিজুমিতে যদি আপনার কোন এরকম ভালো ইউনিভার্সিটির নাম থাকে, তাহলে আপনি অনেক ক্ষেত্রে Unfair advantage পেয়ে যেতে পারেন। সঠিক লোকেদের সাথে যদি আপনি সঠিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন, তাহলে সেটাও বিজনেসের ক্ষেত্রে Unfair advantage দিয়ে যায়। যেমনটা Snapchat এর কো-ফাউন্ডার স্পিগেল পেয়েছিলেন।
এবার সঠিক লোকেদের কাছ থেকে ফান্ডিং পাওয়ার জন্য আপনাকে স্পিগেলর মত ভাগ্যবান হতেই হবে, সেটা জরুরি না। যদি আপনি কোনভাবে সঠিক জায়গায় পৌঁছে, সঠিক লোকেদের সাথে একটা স্ট্রং নেটওয়ার্ক কানেকশন তৈরি করতে পারেন, তাহলে আপনি অনেক অ্যাডভান্টেজ পেতে পারেন। শুধু খেয়াল রাখবেন রিলেশনশিপটা যেন জেনুইন হয়।
ব্যবসায় কৌশল পদ্ধতি কি?
ব্যবসায় কৌশল পদ্ধতি হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা ব্যবসায়িক লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য কার্যক্রম ও পরিকল্পনা নির্ধারণ করে। এটি সাধারণত নিচের ধাপগুলি অন্তর্ভুক্ত করে:
- বাজার গবেষণা: বর্তমান ও সম্ভাব্য বাজার, প্রতিযোগী, এবং গ্রাহকদের চাহিদা বিশ্লেষণ করা।
- লক্ষ্য নির্ধারণ: ব্যবসার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলি নির্ধারণ করা।
- কৌশল পরিকল্পনা: লক্ষ্যগুলি পূরণের জন্য কৌশল ও পরিকল্পনা তৈরি করা।
- সম্পদ ব্যবস্থাপনা: মানুষ, অর্থ, এবং অন্যান্য সম্পদের কার্যকর ব্যবস্থাপনা করা।
- বাস্তবায়ন: পরিকল্পনাগুলি কার্যকরী করার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা।
- মূল্যায়ন ও নিয়ন্ত্রণ: কার্যক্রমের ফলাফল মূল্যায়ন করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কৌশল পরিবর্তন করা।
ব্যবসায় কৌশল পদ্ধতি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং এটি বাজার পরিস্থিতি ও ব্যবসার অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে।
ব্যবসায়িক কৌশল কয়টি?
ব্যবসায়িক কৌশলের প্রধানত তিনটি ধরন রয়েছে:
- কর্পোরেট কৌশল (Corporate Strategy):
- কর্পোরেট কৌশল একটি প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে। এটি ব্যবসার বিভিন্ন ইউনিটগুলির মধ্যে সম্পদ বণ্টন ও সংহতি বজায় রাখে।
- উদাহরণ: ব্যবসার প্রসারণ বা সংকোচন, নতুন বাজারে প্রবেশ, নতুন পণ্য বা সেবা চালু করা।
- ব্যবসায়িক ইউনিট কৌশল (Business Unit Strategy):
- এই কৌশলটি ব্যবসার নির্দিষ্ট ইউনিট বা বিভাগের জন্য নির্ধারণ করা হয়। এটি নির্দিষ্ট বাজারে প্রতিযোগিতায় কিভাবে জয়ী হতে হবে তা নির্দেশ করে।
- উদাহরণ: নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার জন্য বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণ, লক্ষ্যবস্তু গ্রাহক চিহ্নিত করা।
- কার্যকরী কৌশল (Functional Strategy):
- কার্যকরী কৌশল হল প্রতিটি বিভাগের (যেমন, বিপণন, উৎপাদন, মানবসম্পদ, ইত্যাদি) জন্য নির্ধারিত কৌশল। এটি ব্যবসায়িক ইউনিট কৌশলকে সহায়তা করে এবং কার্যক্রমগুলির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
- উদাহরণ: বিপণন বিভাগের জন্য বিজ্ঞাপন কৌশল, উৎপাদন বিভাগের জন্য মান নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।
এই তিন ধরনের কৌশল একসাথে কাজ করে একটি প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক লক্ষ্য ও সাফল্য অর্জনে সহায়তা করে।
ব্যবসায়িক কৌশল কিভাবে তৈরি হয়?
ব্যবসায়িক কৌশল তৈরি করা একটি পরিকল্পিত এবং সুসংহত প্রক্রিয়া। এটি একটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করে। ব্যবসায়িক কৌশল তৈরি করার প্রক্রিয়াটি সাধারণত নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে:
- দৃষ্টিভঙ্গি এবং লক্ষ্য নির্ধারণ:
- প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিভঙ্গি এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এটি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলিকে নির্দেশ করে এবং প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধ এবং উদ্দেশ্য প্রকাশ করে।
- বাজার বিশ্লেষণ:
- বর্তমান বাজার পরিস্থিতি, প্রতিযোগী, গ্রাহকদের চাহিদা এবং বাজারের ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করা হয়। এতে করে প্রতিষ্ঠানের জন্য সুযোগ এবং হুমকি চিহ্নিত করা যায়।
- স্বাতন্ত্র্য বিশ্লেষণ (SWOT Analysis):
- প্রতিষ্ঠানের শক্তি (Strengths), দুর্বলতা (Weaknesses), সুযোগ (Opportunities) এবং হুমকি (Threats) বিশ্লেষণ করা হয়। এটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দেয়।
- কৌশল নির্ধারণ:
- উপরোক্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণ করা হয়। এতে সাধারণত উৎপাদন, বিপণন, অর্থায়ন, মানবসম্পদ এবং প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক অন্তর্ভুক্ত থাকে।
- কৌশল বাস্তবায়ন পরিকল্পনা:
- নির্ধারিত কৌশলগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা পরিকল্পনা করা হয়। এর জন্য একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়, যেখানে কাজের সময়সীমা, দায়িত্ব এবং সম্পদ বরাদ্দের উল্লেখ থাকে।
- পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন:
- কৌশল বাস্তবায়নের পর এর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন করা হয়। এ পর্যায়ে নির্ধারিত লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে বাস্তব ফলাফল তুলনা করা হয় এবং প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
এই ধাপগুলো অনুসরণ করে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কৌশল তৈরি করা হয়, যা প্রতিষ্ঠানের সাফল্য এবং স্থায়িত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।