বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং বিভিন্ন ধরণের ব্যবসার আইডিয়া উদ্ভাবিত হচ্ছে, যা গ্রাম ও শহরের উভয় জায়গায় কার্যকর হতে পারে। এখানে ২১টি ব্যবসার আইডিয়া আলোচনা করা হলো, যা গ্রাম ও শহর (villages and towns) উভয় স্থানে শুরু করা যেতে পারে।
১. অর্গানিক ফার্মিং ব্যবসার আইডিয়া গ্রাম ও শহরের জন্য
গ্রামে ও শহরের কাছাকাছি অর্গানিক ফার্মিং একটি বিশাল সম্ভাবনাময় বিজনেস আইডিয়া। জৈবিক পদ্ধতিতে চাষ করা ফসলের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মানুষ এখন স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে ঝুঁকছে, তাই অর্গানিক ফার্মিং থেকে ভাল আয় করা সম্ভব।
অর্গানিক ফার্মিং বলতে উৎপাদনে যেন কোনরকম রাসায়নিক মিশ্রিত না হয়। অর্থাৎ রাসায়নিক ছাড়া আপনি যদি অর্গানিক পদ্ধতিতে জৈবিক উপায় উৎপাদন করা। সেটাকে অর্গানিক উৎপাদন বলে। এক্ষেত্রে আপনি যদি অর্গানিক ফার্মিং করে আপনার একটি ব্যবসা শুরু করতে চান, সেটা গ্রাম অথবা শহর উভয় জায়গায় শুরু করতে পারবেন।
২. পোল্ট্রি ফার্মিং (Poultry farming) ব্যবসার আইডিয়া গ্রাম ও শহরের জন্য
মুরগি ও হাঁসের খামার করা অনেকের জন্য লাভজনক হতে পারে। গ্রামে মুরগির ডিম ও মাংসের চাহিদা যেমন আছে, শহরেও তা প্রচুর। সঠিক যত্ন ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই বিজনেস থেকে উল্লেখযোগ্য আয় করা সম্ভব।
শহরের মধ্যে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ডিমের চাহিদা রয়েছে। আপনি যদি একটি ফার্মিং ব্যবসা শুরু করেন, তাহলে ডিমের ব্যবসা করে আপনি ডিম উৎপাদন করে ভালো পরিমাণ লাভবান হতে পারবেন। মুরগি বা হাসের ডিমের ব্যবসা আপনি শুরু করতে পারেন।
এক্ষেত্রে সরাসরি ফার্ম থেকে আপনি উৎপাদন করে পাইকারিতে সেগুলো বিক্রি করবেন। শহরের মধ্যে যে পরিমাণ মুরগির ডিম বা হাঁসের ডিমের চাহিদা রয়েছে, সেই পরিমাণ উৎপাদন কম। তাই আপনি এই ব্যবসার উদ্যোগটি নিয়ে ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
৩. ই-কমার্স বিজনেস ব্যবসার আইডিয়া গ্রাম ও শহরের জন্য
শহরে ই-কমার্স বিজনেস খুবই জনপ্রিয় হলেও, গ্রামেও এটি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনলাইন শপিং এখন অনেক সহজ হয়েছে, তাই আপনি নিজের ই-কমার্স বিজনেস শুরু করে গ্রামীণ ও শহুরে উভয় বাজারেই প্রবেশ করতে পারেন।
মানুষের জীবনের মান প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে। এজন্য মানুষ গ্রামে বসেও এখন ই-কমার্স বিজনেস শুরু করতে সক্ষম হচ্ছে। আপনি যদি অনলাইনে ঘরে বসে আপনার ব্যবসাটি শুরু করতে চান, তাহলে গ্রামে হোক বা শহরে এই ব্যবসাটি শুরু করা আপনার জন্য যথেষ্ট মূল্যবান উদ্যোগ হবে।
আপনি যদি এই ব্যবসাটি শুরু করতে চান, তাহলে ছোটখাটো বিনিয়োগ করে আপনি এই অনলাইন ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। ই-কমার্সে দিন দিন প্রতিনিয়ত কাস্টমার বেড়ে যায় চলছে। আপনি যদি আপনার কাস্টমারদের কে ডিল করতে চান, তাহলে দ্রুত এই অনলাইন ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
৪. কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ (Processing of agricultural products) ব্যবসার আইডিয়া গ্রাম ও শহরের জন্য
কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ বিজনেস গ্রামে খুবই উপকারী হতে পারে। ফসল তোলার পর সেই পণ্যগুলো প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন প্রকার খাদ্যপণ্য তৈরি করে বিক্রি করা যায়। এতে কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পাওয়া সম্ভব হয়।
অনেকে আছে সরাসরি কৃষি কাজ করতে পছন্দ করেন না, কিন্তু কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াকরণ উপায়টি ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে আপনি শহরে এনে বিক্রি করার জন্য গ্রাম থেকে কৃষি প্রোডাক্ট গুলো সংগ্রহ করবেন। এবং পরবর্তীতে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে শহরের মধ্যে বিক্রি করবেন।
যখন আপনি একটা ব্যবসা শুরু করবেন, তখন আপনাকে কৌশল অনুসরণ করতে হবে। এই কৃষিক পণ্য প্রক্রিয়াকরণ এই ব্যবসাটি মূল্যবান এবং লাভজনক। এরকম একটি ব্যবসাটি শুরু করার জন্য অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তাই আজকে এই আইডিয়া আপনাদের জন্য শেয়ার করলাম।
৫. গোডাউন ও হিমাগার (Godown and cold storage)
গ্রাম ও শহরের মধ্যে কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য গোডাউন ও হিমাগার একটি প্রয়োজনীয় বিজনেস। বিশেষ করে মৌসুমী ফসল সংরক্ষণে হিমাগারগুলো অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
আমাদের বাংলাদেশের মধ্যে আলু সম্পর্কে সবাই জানেন। আলু হিমাগারের রেখে প্রথমে মজুদ করা হয়, পরবর্তীতে সেগুলো বেশি দামে বিক্রি করা হয়। আপনি চাইলে হিমাগারে আলু মজুদ করে রাখতে পারেন। এই মজুদার ব্যবসাটি খুবই জনপ্রিয়।
হিমাগারে আপনি যদি বিভিন্ন পণ্য বা সামগ্রী হিমাগার করে রাখেন। পরবর্তীতে সেগুলো বেশি লাভে বিক্রি করতে পারবেন। তাই আপনি একটা হিমাগার ব্যবসা শুরু করতে পারেন। হিমাগারে আপনি সবকিছুই মজুদ করে রাখতে পারেন।
৬. হস্তশিল্প ও কারুশিল্প (Handicrafts and Crafts)
গ্রামাঞ্চলে প্রচুর হস্তশিল্প ও কারুশিল্প (Handicrafts and Crafts) তৈরি হয় যা শহরে খুবই জনপ্রিয়। এই পণ্যগুলির একটি ভালো মার্কেটিং ব্যবস্থা করে শহরের বাজারে বিক্রি করা সম্ভব।
আগেকার সময়ে শুধুমাত্র গ্রাম অঞ্চলে হস্তশিল্প ও কারুশিল্প চাহিদা ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ের শহরের মধ্যে এই হস্তশিল্প ও কারুশিল্প নিয়ে খুব প্রতিযোগিতা চলছে। শহরের মধ্যে বিশেষ করে সব জায়গায় হস্তশিল্প ও কারুশিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে এর চাহিদা ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ধরনের হস্তশিল্পের প্রোডাক্টগুলো সবচেয়ে মূল্যবান। এর জন্য এই প্রোডাক্টগুলোতে বেশি পরিমাণে প্রফিট করা যায়।
আপনি যদি হস্তশিল্প ও কারুশিল্প (Handicrafts and Crafts) উৎপাদনে ভালো লাভবান হতে চান, তাহলে হস্তশিল্প ও কারুশিল্পের এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। ব্যবসাটি শুরু করার জন্য বেশি পরিমাণে বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না। স্বল্প বিনিয়োগে এই ব্যবসাটি শুরু করা যায়। এবং আপনি যে কোন এরিয়াতে, বা আপনার বাড়িতে বসে শুরু করতে পারেন।
৭. পোলট্রি ফিড বিজনেস (Poultry feed business)
মুরগি, হাঁস ইত্যাদির খাদ্য উৎপাদন ও বিক্রি করা একটি লাভজনক বিজনেস হতে পারে। এর জন্য সামান্য পুঁজি ও কিছু প্রযুক্তি জানা থাকলেই যথেষ্ট।
বর্তমান সময়ে পোলট্রি ফিড বিজনেসটি (Poultry feed business) খুবই লাভজনক। এই ব্যবসায় উৎপাদন করার জন্য বেশি একটা খরচ হয় না। শুধুমাত্র সিম্পল একটা মেশিন সংগ্রহ করলে হয়। সে মেশিনের মাধ্যমে এগুলো রিফাইন করে পোলট্রি ফিড বিজনেস শুরু করা যায়।
আপনি যদি আপনার এলাকাতে এই ব্যবসাটি শুরু করতে চান, তাহলে এই ব্যবসাটি খুব দ্রুত শুরু করুন। যেন আপনার এলাকায় অন্য কেউ এই ব্যবসাটি শুরু না করে। কারণ আপনি যদি একবার একটা ব্যবসার লোকেশন ধরে ফেলেন, তাহলে সে এরিয়াতে আপনি সবসময় রাজত্ব করতে পারবেন।
কিভাবে পোলট্রি ফিড (Poultry feed) তৈরি করতে হয়, এই বিষয়ে যদি আপনার কোন অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে youtube থেকে দেখে সে বিষয়ে শিখতে পারেন। এই বিষয়ে ইউটিউবে অনেকগুলো গাইডলাইন রয়েছে, যেগুলো আপনি অনুসরণ করার মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন।
৮. কসমেটিক্স উৎপাদন
গ্রামে ও শহরে কসমেটিক্সের চাহিদা প্রচুর। ঘরে বসেই নানান প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে কসমেটিক্স তৈরি করে তা বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব।
অর্গানিক কসমেটিকস তৈরি করা খুবই লাভজনক। অর্গানিক কসমেটিকস তৈরি করতে তেমন একটা খরচ নাই। এমনকি আপনি এই অর্গানিক কসমেটিক যদি তৈরি করতে সক্ষম হন, তাহলে এগুলো তৈরি করে সামাল দিতে পারবেন না।
কারণ এগুলোর কাস্টমার অনেক বেশি। শহর এলাকার মধ্যে যে পরিমাণ অর্গানিক কসমেটিকের চাহিদা রয়েছে, সেই পরিমাণ কিন্তু উৎপাদন হয় না। এজন্য আপনি চাইলে আপনার এই অর্গানিক কসমেটিক উৎপাদনের ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
৯. ফল ও সবজি বাগান (Fruit and vegetable garden)
গ্রামে জমি পাওয়া যায় এবং প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য থাকে, যা ফল ও সবজি বাগান করার জন্য আদর্শ। শহরের নিকটবর্তী এলাকায় এই বিজনেস শুরু করলে লাভ বেশি হতে পারে।
তবে এমন নয় যে, এটি শুধুমাত্র শহর এলাকার মধ্যেই করতে হবে। আপনি চাইলে গ্রামে ফল ও সবজি বাগান করতে পারেন। গ্রামে ফল ও সবজি বাগান (Fruit and vegetable garden) করে পরবর্তীতে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় শহরে নিয়ে আসতে পারেন। প্রক্রিয়াজাত করা ফল ও সবজি আপনি যদি শহরে এনে বিক্রি করেন, তাহলে এখান থেকে সবচেয়ে ভালো প্রফিট করতে পারবেন।
ফল ও সবজি বাগান আমার পছন্দের একটি কাজ। আমি যদি কৃষি কাজ করি, তখন আমার এই বিষয়ে খুব ভালো লাগে। এজন্য আপনি যদি কৃষির উপরে ভালো চর্চা রাখেন, তাহলে আপনার শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। এমন কি একাজগুলো করার জন্য সবচেয়ে মধুর লাগে। এই কাজগুলো আপনাকে অবশ্যই ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী করে দিবে।
১০. দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য
দুধ ও দই, ছানা, মাখন ইত্যাদি দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করা খুবই লাভজনক। শহরে এই পণ্যের চাহিদা অনেক বেশি, তাই গ্রাম থেকে উৎপাদন করে সরাসরি শহরের বাজারে সরবরাহ করা যায়।
দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য এর প্রয়োজন হয় না এমন কোন পরিবার নাই। প্রতিটি পরিবারেই বর্তমান সময়ে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের ব্যবহার রয়েছে। আপনি যদি দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করেন, অথবা একটি ছাগলের খামার, অথবা গরুর খাবার করে, অথবা মহিষের কামার করে দুধ ও দই উৎপাদনের এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
এটি শুরু করলে আপনি খুব সহজে লাভবান হতে পারবেন। এটি খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা যদিও একটু শুরু করাটা জটিল। কারণ এখানে আপনাকে ছাগল গরু মহিষ এগুলো ক্রয় করতে হবে। ক্রয় করে সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করে সেগুলো থেকে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করতে হবে।
১১. বেকারি বিজনেস
বেকারি পণ্য যেমন পাউরুটি, কেক, বিস্কুট ইত্যাদি শহর ও গ্রাম উভয় স্থানেই অত্যন্ত জনপ্রিয়। ছোট পরিসরে বেকারি বিজনেস শুরু করে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করা যেতে পারে।
আমার এরিয়ার মধ্যে অনেকগুলো বেকার রয়েছে। আপনি যদি সন্ধ্যার পরপর বেকারিতে খাবারের জন্য যান, তাহলে কোন বেকারিতে আপনি খাবার খুঁজে পাবেন না। বেকারির খাবারের এমন চাহিদা রয়েছে বর্তমানে। কারণ বেকারিতে যে সকল খাবার গুলো উৎপাদন করা হয়। এগুলো মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় মজার খাবার।
এই মজার খাবারগুলো যদি আপনি একটি বেকারি দিয়ে উৎপাদন করে সেগুলো আপনার এরিয়াতে ডেলিভারি করেন, অথবা আপনি একটি বেকারি করে সেখানে যদি লোকাল বিজনেস করেন। সে ক্ষেত্রে খুব ভালো লাভবান হতে পারবেন। বেকারির একটি লাভজনক ব্যবসা শুরু করা খুবই সহজ। শুধু মাত্র কয়েকজন কর্মী নিয়োগ করে আপনি আপনার বেকারিতে উৎপাদন শুরু করতে পারেন।
১২. বুটিক ও ফ্যাশন ডিজাইন (Boutique and fashion design)
শহরে ফ্যাশন ডিজাইন ও বুটিক বিজনেসের অনেক চাহিদা রয়েছে। গ্রামেও এই বিজনেস শুরু করা যায়। স্থানীয়ভাবে তৈরি পোশাক ও অ্যাক্সেসরিজ শহরের বাজারে ভাল বিক্রি হয়।
বর্তমান সময়ের শহর থেকে গ্রাম অঞ্চলের সব জায়গায় বুটিক ও ফ্যাশন ডিজাইনের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। আপনি যদি একজন বুটিক ও ফ্যাশন ডিজাইনার (Boutique and fashion design) হিসেবে আপনার ব্যবসা শুরু করতে চান, তাহলে আজই শুরু করুন। এব্যবসাটি চাইলে আপনি অনলাইন এর মাধ্যমে প্রচার করতে পারেন। অনলাইনে আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সেল দেওয়ার জন্য খুব সহজে একটি মাধ্যম।
ফ্যাশন ডিজাইন ব্যবসাটি বর্তমান সময়ে লাভজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি এর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এর উৎপাদন ক্ষমতা বৃত্তি পাচ্ছে না। এজন্য সারা বিশ্বের এই চাহিদা পূরণের জন্য, বা আপনার এলাকার ও শহরের চাহিদা পূরণের জন্য এ ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
১৩. পশু খামার
গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির খামার করা একটি লাভজনক বিজনেস হতে পারে। গ্রামাঞ্চলে পর্যাপ্ত জমি পাওয়া যায়, এবং পশু পালনের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ সহজলভ্য থাকে।
পশুর খামার শুরু করার ক্ষেত্রে প্রথমে আপনি ছোট থেকে শুরু করতে পারেন। প্রথমে আপনি এক দুইটা ছাগল, এক দুইটা গরু, এবং কয়েকটি মহিষ নিয়ে শুরু করতে পারেন। যদি অল্প অল্প করে শুরু করেন, পরবর্তীতে এগুলো থেকে বাছুর আসবে। সে বাচ্চা দিয়ে আপনি পরবর্তীতে আপনার পশুর খামার বড় করতে পারবেন।
সেই সাথে আপনি প্রতি বছরে কোরবানির ঈদে এবং বিভিন্ন আয়োজনে অনেকগুলো পশু বিক্রি করতে পারবেন। আপনি যদি বিভিন্ন পশু বিক্রির ব্যবসাটি করেন। একটি খামার করে সে ব্যবসা থেকে লাভবান হতে পারবেন।
পশুর খামারের ব্যবসাটি বর্তমান সময়ে খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। কারণ আপনি যে পরিমাণ উৎপাদন করবেন, সেই পরিমাণে কিন্তু চাহিদা অনেক বেশি। এজন্য আপনি যত বেশি উৎপাদন করতে পারবেন, তত বেশি এখান থেকে লাভবান হবেন। যদি আপনার খামারে জৈবিক উপায়ে পশু পালন করেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে বেশি দামে সেগুলো বিক্রি করতে পারবেন। পশুদের কে বিভিন্ন রাসায়নিক খাবার না খাওয়ায়ে অর্গানিক খাবার গুলো খাওয়াবেন, তাহলে পশুগুলো জৈবিক উপায়ে বৃদ্ধি পাবে।
১৪. বায়োগ্যাস প্লান্ট
গ্রামে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করে জ্বালানি তৈরি করা একটি সম্ভাবনাময় বিজনেস। এর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদন করা যায় যা স্থানীয় চাহিদা মেটাতে সহায়ক।
আমি আবার বাড়িতে বায়ু গ্যাস ব্যবহার করে থাকি। যদি আপনার কাছে গরুর খামার থাকে, সেই খাবারের সুবিধা ব্যবহার করে আপনি বায়োগ্যাস তৈরি করতে পারবেন। গ্রাম অঞ্চলে অধিকাংশ মানুষের কাছে কিন্তু গরু পালন করেন।
এক্ষেত্রে যারা গাভী পালন করেন, তাদের যে গোবরগুলো হয়, সে গোবরগুলো দিয়ে ব্যবহার করে জৈবিক বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করা যায়। বায়োগ্যাস তৈরি করে সেখান থেকে ভালো লাভজনক হওয়া যায়। জৈবিক উপায়ে যদি আপনি গ্যাস উৎপাদন করেন, তাহলে এটি দেশের মঙ্গল এবং দশের মঙ্গল হবে।
১৫. গ্রামীণ পর্যটন (Rural tourism)
গ্রামীণ পর্যটন এখন একটি নতুন ধারার বিজনেস হয়ে উঠছে। শহরের মানুষ গ্রামের সৌন্দর্য ও প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে চায়। গ্রামে পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করা সম্ভব।
আপনার যদি এমন একটা জায়গা থাকে যে সম্পদটা আপনি ফেলে রেখেছেন। সে গ্রামীমের জায়গা ব্যবহার করে একটি গ্রামীন পর্যটন (Rural tourism) তৈরি করতে পারেন। পর্যটন এলাকাগুলোর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ বর্তমান সময়ে ঘোরাফেরায় রয়েছে। এজন্য আপনি যদি সুন্দর একটি রিসোর্ট এর মত পর্যটন এলাকা তৈরি করেন। মানুষ সেখানে যাবে এবং তারা ঘোরাফেরা করবে
সেখানে টিকিটের ব্যবস্থা করতে পারেন। টিকেট বিক্রি করার মাধ্যমে লাভ করতে পারেন। খুব ভালো একটি লাভজনক ব্যবসা শুরু করার জন্য পর্যটন এলাকা হচ্ছে খুব ভালো একটি এরিয়া। সেখানে আপনি বিভিন্নভাবে লাভজনক একটি পর্যায়ে গ্রামীন পর্যটন ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন।
১৬. হাইড্রোপনিক্স ফার্মিং
শহরে জমির সংকটের কারণে হাইড্রোপনিক্স ফার্মিং একটি সম্ভাবনাময় বিজনেস। এই পদ্ধতিতে পানি ব্যবহার করে বিভিন্ন ফসল চাষ করা যায়। এটি একটি আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি।
আপনি হয়তো আগে জানতেন না শুধুমাত্র পানি দিয়ে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা যায়। আপনি যদি এই বিষয়ে না জানেন, তাহলে youtube থেকে এবিষয়ে ট্রেনিং গ্রহণ করতে পারেন। আপনি যদি হাইড্রোপনিক্স ফার্মিং ব্যবসাটি শুরু করেন, তাহলে এটি খুবই লাভজনক হবে।
কারণ শহর এরিয়ার মধ্যে তেমন একটি জমি নাই। জমি না থাকার কারণে জায়গার বেশি অভাব। এক্ষেত্রে আপনি যদি হাইড্রোপনিক্স ফার্মিং ব্যবসা করে ভালো উৎপাদন করতে পারেন। সেগুলো ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন। এটি খুবই লাভজনক এবং সহজ।
১৭. ফ্লাওয়ার কাল্টিভেশন
ফুল চাষ একটি লাভজনক বিজনেস হতে পারে। শহরে ফুলের চাহিদা প্রচুর, বিশেষ করে বিয়ে, অনুষ্ঠান ও উৎসবে। গ্রামাঞ্চলে ফুল চাষ করে শহরের বাজারে সরবরাহ করা যেতে পারে।
বর্তমান সময়ে আপনি চাইলে হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে শহরের মধ্যে আপনি ফুলের চাষ করতে পারেন। এক্ষেত্রে ছোট্ট একটি এরিয়ার মধ্যে পানি ব্যবহার করে সে পানির উপরে ফুলের চাষ করা সম্ভব। বর্তমান সময়ে এটি খুবই লাভজনক।
আপনি যদি ফুল চাষ করেন, তাহলে আপনার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য আপনার কাছ থেকে ফুল সংগ্রহ করবে। সবাই এক্ষেত্রে আপনার কাছ থেকে ফুল নিয়ে যাবে। যেহেতু অনুষ্ঠানগুলো করার জন্য ফুল প্রয়োজন হয়। এজন্য আপনি ভাল একটি অ্যামাউন্টে বিক্রি করতে পারবেন। কারণ শহরের মধ্যে ফুলের চাহিদা বেশি, কিন্তু উপাদান কম। এক্ষেত্রে আপনি উৎপাদন করে মানুষের ফুলের চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারেন।
১৮. আইসক্রিম ও ডেইরি প্রোডাক্টস
আইসক্রিম ও অন্যান্য ডেইরি প্রোডাক্টস গ্রাম ও শহরের উভয় স্থানেই খুবই জনপ্রিয়। স্বল্প পুঁজি নিয়ে এই বিজনেস শুরু করা সম্ভব এবং এর মুনাফা অনেক বেশি।
শহর এলাকায় বর্তমানে যেভাবে গরম পড়তেছে, একইভাবে গ্রামেও গরমের উত্তাপ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে যখন আইসক্রিম ও ডেইরি প্রোডাক্টস তৈরি করে বিক্রি করতে পারেন। আইসক্রিম ও ডেইরি প্রোডাক্টস তৈরি করাটা খুবই সহজ। আপনি যদি কিভাবে প্রোডাক্ট উৎপাদন করবেন, এবিষয়ে জানতে না পারেন, তাহলে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে আপনার কোম্পানিতে নিয়োগ দিতে পারেন।
এটি আপনার একটি স্বনামধন্য কোম্পানিতে পরিণত হবে। কারণ আইসক্রিম ও ডেইরি প্রোডাক্টস ফার্মের খাবারগুলো রয়েছে, সেগুলো প্রতিদিনই মানুষ কেনাকাটা করে। কারণ এগুলো প্রতিদিনই মানুষের প্রয়োজন হয়। এজন্য আপনি চাহিদা সম্মত এই ব্যবসাটি শুরু করলে খুব ভালো একটি লাভজনক উপায়ে এগিয়ে যেতে পারবেন।
১৯. অর্গানিক হানি প্রোডাকশন
অর্গানিক মধু উৎপাদন একটি লাভজনক বিজনেস। গ্রামে মৌমাছি পালন করে প্রাকৃতিক মধু উৎপাদন করা যায় যা শহরে খুবই চাহিদাসম্পন্ন।
একসময় মধু নিয়ে মানুষ তেমন একটা আগ্রহ ছিল না। কিন্তু দিন দিন মধুর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়াতে বর্তমানে মানুষ অর্গানিক মধু তৈরিতে খুব বেশি মনোযোগী হয়েছে। আপনি যদি অর্গানিক মধু তৈরি করে বিক্রি করতে পারেন, তাহলে এটি আপনার জন্য খুব ভালো একটি লাভজনক ব্যবসা হবে।
বর্তমানে অনলাইনে অনেকে মধু বিক্রি করেন। আপনি শুধুমাত্র আপনার এরিয়াতে মধু বিক্রি করতে না চাইলে, অনলাইনে একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করে সেখানে আপনার মধু বিক্রি করতে পারেন। খুব ভালো বিক্রি করতে পারবেন এবং একটি ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবেন।
২০. হারবাল ও আয়ুর্বেদিক প্রোডাক্টস
গ্রামে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে হারবাল ও আয়ুর্বেদিক পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব। শহরের মানুষ এখন প্রাকৃতিক পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী, তাই এই বিজনেস থেকে ভাল আয় করা সম্ভব।
হারবাল কসমেটিক গুলোর চাহিদা দিন দিন পাচ্ছে। হারবাল কসমেটিক কিভাবে তৈরি করতে হয়, এবিষয়ে যদি আপনি ছয় মাসের কারো কাছ থেকে ট্রেনিং গ্রহণ করেন, তাহলে আপনি পুরোপুরি ভাবে হারবালের বিভিন্ন প্রোডাক্ট উৎপাদন করতে পারবেন।
হারবাল পণ্য সবাই পছন্দ করে। কারণ হারবালার সাইড ইফেক্ট থাকে না। এজন্য হারবাল পণ্য সবাই ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। এজন্য আপনি যদি আপনার এরিয়াতে হারবাল এর ব্যবসা শুরু করেন, তাহলে খুব লাভজনক হতে পারবেন। এজন্য আপনি খুব দ্রুত এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
২১. অনলাইন এডুকেশন প্ল্যাটফর্ম
শিক্ষার ক্ষেত্রে অনলাইন এডুকেশন প্ল্যাটফর্ম একটি নতুন সম্ভাবনা। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও অনলাইন শিক্ষা এখন জনপ্রিয় হচ্ছে। বিভিন্ন কোর্স ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে এই বিজনেস শুরু করা যায়।
টেন মিনিট স্কুল এবং ইউডেমি ইত্যাদি এই সকল জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গুলোর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার অনলাইন এডুকেশন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এগিয়ে যেতে পারবেন। চাইলে আপনি সরাসরি ব্যক্তিগত একটি এডুকেশন শুরু করতে পারেন। অথবা আপনি নিজে ইউটিউব এবং টেন মিনিট স্কুলের মত প্ল্যাটফর্ম গুলোর মধ্যে বাংলাদেশের বসেই শিক্ষা দান করতে পারেন।
এডুকেশন প্লাটফর্ম গুলো বর্তমানে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। এজন্য আপনি যদি এরকম একটি সেক্টরে কার্যক্রম করে, তাহলে ভালো লাভজনক ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবেন।
উপসংহার
গ্রাম ও শহরের জন্য উল্লিখিত বিজনেস আইডিয়াগুলো একেকটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগ হতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা, পরিচালনা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে এগুলি থেকে উল্লেখযোগ্য আয় করা সম্ভব।
বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির সাহায্যে বিজনেস শুরু করা তুলনামূলক সহজ এবং লাভজনক হয়ে উঠেছে। তাই সঠিক উদ্যোগ ও পরিকল্পনার মাধ্যমে নিজস্ব বিজনেস গড়ে তোলা সম্ভব।
0 মন্তব্যসমূহ