Central banks and commercial bank: কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সম্পর্ক

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি প্রতিষ্ঠান আমাদের আর্থিক ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বাংলাদেশ ব্যাংক) এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে কী সম্পর্ক, কিভাবে তারা একে অপরের সঙ্গে কাজ করে, এবং কীভাবে এই সম্পর্ক আমাদের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে, তা জানানোই এই ব্লগ পোস্টের উদ্দেশ্য।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংক্ষিপ্ত পরিচয়:

কেন্দ্রীয় ব্যাংক হল একটি দেশের প্রধান ব্যাংক, যা সরকারি নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি পরিচালনা করে। বাংলাদেশে, এই ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমরা যারা বাংলাদেশী নাগরিক পেয়েছি, তাদের এবিষয়গুলো জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য এই বিষয়গুলো জানা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ অনেকগুলো রয়েছে।

এবিষয়গুলো যদি আপনারা জেনে রাখেন, তাহলে পরবর্তীতে এগুলো কাজে লাগবে। এবং ভবিষ্যৎ জীবনে আপনাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পর্কে মধ্যে কি কি, বিষয়গুলো আপনাকে জেনে নিতে হবে। এবং কি কারণে আপনাকে ব্যাংক ব্যবহার করতে হবে, এবিষয়গুলো আপনি বুঝতে পারবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক মূলত নিম্নলিখিত কাজগুলো সম্পন্ন করে:

  • মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ: অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা।
  • মুদ্রানীতি: সুদের হার নির্ধারণ ও ব্যাংকগুলোর জন্য রিজার্ভের পরিমাণ নির্ধারণ করা।
  • ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ: বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করা।
  • বিনিময় হার: বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার স্থির করা এবং বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ পরিচালনা করা।

বাণিজ্যিক ব্যাংক এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এমন প্রতিষ্ঠান, যা জনগণ ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করে এবং ঋণ প্রদান করে। বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যাবলী হলো:

  • অমানত গ্রহণ: সঞ্চয় ও স্থায়ী আমানত গ্রহণ।
  • ঋণ প্রদান: ব্যবসা ও ব্যক্তিগত ঋণ প্রদান।
  • বিনিয়োগ: সরকারি বন্ড ও অন্যান্য বিনিয়োগ।
  • সেবাপ্রদান: এলসি খোলা, টাকা স্থানান্তর, চেক নিষ্পত্তি ইত্যাদি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সম্পর্ক

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে সম্পর্ক একটি সহযোগী ও নিয়ন্ত্রক সম্পর্ক। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এবং টাকার মান সঠিক রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক একসাথে কাজ করে। এবং তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সম্পর্ক নিবেদ ভাবে জড়িত। এজন্য আমাদেরকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সম্পর্কের মধ্যে যে বিষয়গুলো রয়েছে। সে বিষয়গুলো আমাদের পড়াশোনা করা উচিত।

নিম্নে এই সম্পর্কের প্রধান দিকগুলো আলোচনা করা হলো:

কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে, তাদের এই সম্পর্কের কারণ এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ, এবিষয় নিয়ে আমরা নিজেই আলোচনা করেছি। আপনারা যদি পড়েন, তাহলে বুঝতে পারবেন।

১. নীতি নির্ধারণ ও প্রয়োগ

বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালা নির্ধারণ করে, যা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনাকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, মুদ্রানীতি ও সুদের হার নির্ধারণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির চেষ্টা করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এই নীতিমালা মেনে চলার মাধ্যমে ঋণ প্রদান ও আমানত গ্রহণের হার নির্ধারণ করে।

একটি দেশের মুদ্রা মান যত বেশি কম থাকে ততই এর মুদ্রা মান নিয়ন্ত্রণ হারায়। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল দায়িত্ব হচ্ছে মুদ্রার নিয়ন্ত্রণ করা। মুদ্রার মান যত বেশি থাকবে, তত বেশি দেশের আর্থিক অবস্থা ভালো থাকবে।

২. নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি

বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম তদারকি করে। এটি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রিজার্ভ রাখার পরিমাণ নির্ধারণ এবং বিভিন্ন নিয়মাবলী মেনে চলার উপর তদারকি করে। এর ফলে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণ জনগণের অর্থ সুরক্ষিত থাকে।

সাধারণ জনগণ তাদের যে সম্পত্তিগুলো ব্যাংকে জমা দেয়, তার দায়িত্ব নেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এইগুলো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করেন। এজন্য যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক না থাকে, তাহলে বাংলাদেশের নাগরিকদের যে সম্পদের দায়িত্ব সেটি নেওয়ার জন্য কেউ থাকবে না। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কে সবসময় strong থাকতে হয়।

৩. ঋণ প্রদান ও আর্থিক স্থিতি

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ঋণ প্রদান করে, যা “লিকুইডিটি” বা তারল্য বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে সল্পমেয়াদী ঋণ নিয়ে নিজেদের তারল্য বাড়াতে পারে, যা পরে তারা গ্রাহকদের ঋণ হিসেবে প্রদান করতে পারে। এতে অর্থনীতির চাকা সচল থাকে।

বাংলাদেশের নাগরিকদেরকে ব্যবসা করতে হলে, বিভিন্ন সময় লোনের সম্মুখীন হতে হয়। জনগণ লোন নেওয়ার জন্য এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মুখীন না হয়ে, বাণিজ্যিক ব্যাংকের সম্মুখীন হয়।

কারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করে, এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করে সেই টাকা আবার সাধারণ জনগণের কাছে লোন হিসেবে বরাদ্দ করে। এবং সেখান থেকে তারা মুনাফা অর্জন করে

৪. বৈদেশিক মুদ্রা ও বিনিময় হার

বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ পরিচালনা করে এবং বিনিময় হার স্থির করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এই বিনিময় হার অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও লেনদেন পরিচালনা করে। এভাবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজতর করে।

বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সার ও যারা বিদেশে বাস করেন, তারা সেখান থেকে যে টাকা এখানে পাঠান, সেগুলো বাংলাদেশের রেমিটেন্স হিসেবে আসে। রেমিট্যান্সের টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে, এবং বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার মান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সব সময় কাজ করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সম্পর্ক নিয়ে সংক্ষিপ্ত সারমর্ম:

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি সুসংহত থাকে এবং প্রবৃদ্ধি লাভ করে। তাই, এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে কেন্দ্রিয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় বৃদ্ধির প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন হওয়া আমাদের সকলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি আমাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। সম্মানিত পাঠক, এবিষয়ে যদি আপনারা আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে চান, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য লেখাগুলো পড়ুন।

যদি অন্য কোন বিষয়ে আমরা এখানে এড়িয়ে যাই, তাহলে আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন। কমেন্ট বক্সে আপনাদের প্রশ্নগুলো লিখুন, আমরা উত্তর দেব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ